রাফাল অস্ত্রে বলীয়ান ভারত। কিন্তু এই যুদ্ধ-সাজে ভারত যে এত তাড়াতাড়ি সজ্জিত হবে, তা ধারণায় ছিল না চীনের। আর তারই প্রভাব এখন দেখা যাচ্ছে লাদাখে। প্রকৃত সীমান্ত রেখা থেকে লাল ফৌজ সম্পূর্ণ সরিয়ে নেওয়ার কথাই ছিল। কিন্তু তা চলছিল ঢিমেতালে। হঠাৎই রাফাল ভারতের বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেই পিছু হটার প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। সরছে চীন। কিন্তু পুরোপুরি কি? তা নয়। আগ্রাসনের চিরাচরিত বদভ্যাস ছাড়েনি বেজিং। লাদাখের বদলে এবার তারা রক্তচক্ষু দেখাতে শুরু করেছে উত্তরাখণ্ড-নেপাল সীমান্তে। গত এক সপ্তাহে উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাসের অন্য প্রান্তে প্রায় এক হাজার চীনা সেনা এসে পজিশন নিয়েছে। পাশাপাশি উত্তর সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশকেও টার্গেট করেছে বেজিং। ফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে চীন-নেপালের ভারত বিরোধী আঁতাত!
উত্তরাখণ্ডের প্রায় ৩৫০ কিমি এলাকাজুড়ে রয়েছে চীন সীমান্ত। লিপুলেখের এই অংশটি এমনই স্ট্র্যাটেজিক একটি পয়েন্ট, যা নেপালের সীমান্তবর্তী অংশ লাগোয়া। গত কয়েক মাস ধরে এই এলাকা নিয়ে নেপালের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন চলছে। লিপুলেখকে নিজেদের অংশ দাবি করে মানচিত্র বদলের জন্য ইতিমধ্যে সংসদে বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে কাঠমাণ্ডু। তারপর থেকেই নেপালের ভারত বিরোধী অবস্থান তীব্র আকার ধারণ করেছে। কিন্তু এই অতি সক্রিয়তাই বিপদে ফেলেছে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি এস ওলিকে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ভারত তাঁকে গদিচ্যুত করার চক্রান্ত করছে। যার প্রবল বিরোধিতা করে নয়াদিল্লি। এমনকী, নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির অন্দরেও প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যকে ঘিরে আলোড়ন শুরু হয়। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ওলি-বিরোধী গোষ্ঠীর প্রধান হলেন প্রচণ্ড তথা পুষ্পকমল দহল। তাঁর শিবির থেকে পাল্টা আক্রমণ করে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেপালকে ক্রমেই চীনের একটি উপনিবেশে পরিণত করতে উদ্যত হয়েছেন। এ নিয়ে চরম রাজনৈতিক বিবাদ চলছে প্রতিবেশী দেশে।
এদিকে, লাদাখে চীনের অতি আগ্রাসী মনোভাবের জবাবে পুরোদস্তুর সেনা, বায়ুসেনা মোতায়েন করেছে ভারত। যা বেজিংয়ের কাছে কিছুটা অপ্রত্যাশিত। একইভাবে চীন প্রবল চাপে পড়েছে সমুদ্ররুটে। কারণ, সেখানেও দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া অক্ষ তৈরি করেছে। মালাবার মহড়ার মাধ্যমে নৌবাহিনীর শক্তি প্রদর্শন করে চীনকে লাগাতার হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে এই চার দেশ। আর এই সবের মধ্যেই ভারতে এসে পৌঁছেছে পাঁচটি রাফাল ফাইটার জেট। তাতে চীনের অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
রাফাল ভারতে আসার কথা ছিল আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। তা যে এত দ্রুত চলে আসবে, আন্দাজ করতে পারেনি বেজিং। রাফাল, স্কাল্প ও মেটিওর মিসাইল—এই গোল্ডেন অ্যারো স্কোয়াড্রনের আগ্রাসন ক্ষমতা যে বিশ্বের অন্যতম সেরা হতে চলেছে, তা চীনও জানে। তাই লাদাখের থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেপালকে সঙ্গে নিয়ে ভারতকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছে তারা। কৈলাস-মানসরোবর রুটের এই লিপুলেখ পাসেই এখন লাল ফৌজের নজর।
সাধারণত চলতি কয়েক মাস বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য এই রুট খুলে যায়। শীতকালের আগে চার মাস প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই প্রান্তে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের যাতায়াত ও ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য তা খোলা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নেপালের সঙ্গে ভারতের স্থায়ী সীমান্ত বিবাদ তৈরি করতেই চীনের এই অতি সক্রিয়তা। পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তিক্ত—আন্তর্জাতিক মহলকে এমন বার্তাও দিতে চাইছে বেজিং। সব মিলিয়ে আসন্ন শীতে হিমালয়ের পাদদেশে সংঘাতের আবহ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণে হাই অল্টিচিউড পোশাক, স্নো টেন্ট অর্ডার দিয়েছে ভারতীয় সেনা। রসদ সাপ্লাইয়ের জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে সিয়াচেন গ্লেসিয়ারকেও।
No comments:
Post a Comment