গোটা বিশ্বের ত্রাস করোনার সংক্রমণে শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট বা জ্বর নয়। নিত্যনতুন চেহারা বদলানো এই রোগের উপসর্গের তালিকায় ফের নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু নতুন রোগ। যেগুলি হল পেট, অন্ত্র, মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভার, হার্ট, অগ্ন্যাশয়, রক্তনালী, চোখ এবং ত্বক সহ বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যা। যা করোনার প্রাথমিক উপসর্গ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত বছরের শেষ দিকে যখন চিনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গিয়েছিল, তখন হয়ত এই ভাইরাসটি নিউমোনিয়ার মতো রহস্যময় ব্যাধি ছিলো না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনার সংক্রমণ অনেক পরেই হয়েছে। যদিও বর্তমানে গোটা বিশ্বকে ছাপিয়ে করোনার হটস্পটে পরিণত হতে চলেছে আমাদের দেশ ভারত।
মার্চ এপ্রিল মাস পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে অনেক কম তথ্যই জানত। পরে ধীরে ধীরে আরও অনেক অজানা তথ্য সামনে এসেছে। ভারতে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় বেশিরভাগ লোকের অসুস্থতার তেমন কোনও বড় লক্ষণ ছিল না। আবার অনেকের মধ্যে কেবল হালকা উপসর্গ ছিল এবং, সামান্য শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ছিল। যারফলে বর্তমানের তুলনায় সেই সময় দেশে মৃতের হারও ছিলো যথেষ্ট কম।
করোনা মহামারী পৃথিবীর সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে, সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা এই মহামারীকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। সংশ্লেষাত্মক, হালকা এবং মারাত্মক।
যদিও চলতি মাসে যেভাবে গোটা দেশে হু-হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ভারত বিশ্বব্যাপী করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। যারফলে করোনা সম্পর্কে প্রতিদিনই উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। চিকিৎসক থেকে শুরু বিজ্ঞানী সকলেই মারণ এই ব্যাধিতে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষন হিসেবে শুধুমাত্র শ্বাসকষ্টের সমস্যাকে দায়ী করছেন না। বরং এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ।
এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গিয়ে এইমসের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ এমভি পদ্মা শ্রীবাস্তব ৩৫ বছর বয়সী এক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। যার করোনার উপসর্গ হিসেবে মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাবের লক্ষণ গুলি ছিলো। এছাড়াও তাঁর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই রোগে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মারণ ব্যাধির জীবাণু মস্তিস্কে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যার কারণে মাথায় রক্ত জমাট বাঁধা বা স্ট্রোকও হতে পারে।
আর এই জাতীয় রোগীদের ফুসফুসে হালকা সংক্রমণ থাকতে পারে। তবে তাঁদের অতিরিক্ত পালমোনারি অবস্থার ফলে মস্তিষ্কের স্ট্রোক এবং হার্ট ব্লকের মতো মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে
কেন কোভিড -১৯ প্রোটোকলের পরিবর্তন করতে হবে?
কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত গাইডলাইনে এতদিন পর্যন্ত জ্বর,শ্বাসকষ্টের সমস্যা,গলা ব্যাথাকে করোনার প্রধান উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়েছিল এবং সেইমতো জনসচেতনতার উদ্দেশে এই বিষয়ে প্রচারও চালানো হয়েছে। যদিও বর্তমানে এই উপসর্গ গুলির সঙ্গে আরও অনেক নতুন উপসর্গের সন্ধান মিলেছে, এবং সেগুলিকে করোনা সংক্রমণের অন্যতম লক্ষ্মণ হিসেবেও স্বীকার করেছেন চিকিৎসক ও গবেষক মণ্ডলীরা।
আর সরকারের এই প্রোটোকল অনুযায়ী জ্বর, শুকনো কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ গুলি করোনার প্রধান উপসর্গ হিসেবে ফোন কল করার সময় টেলিকম সংস্থাগুলি একটি স্বয়ংক্রিয় বার্তায় এটি বর্ণনা করে আসছে।
সুতরাং সব মিলিয়ে বলা চলে, নিত্যনতুন করোনা যেভাবে ভোল বদলাচ্ছে তাতে এই ব্যাধির সংক্রমণের ফলে পেট, অন্ত্র, মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভার, হার্ট, অগ্ন্যাশয়, রক্তনালী, চোখ এবং ত্বক সহ বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে।
যেমন ধরুন, তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, মস্তিষ্কের ফোলাভাব, রক্ত জমাট বাঁধা, স্ট্রোক এমনকি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। শুধু তাই নয়, স্নায়ুর উপরও এই ভাইরাস মারাত্মক প্রভাব ফেলে তার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
No comments:
Post a Comment