স্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের লক্ষ্যে
যেসব সংস্কার জরুরি
পি চিদম্বরম
সুপ্রিম কোর্টকে যাঁরা কাছ থেকে লক্ষ করেন তাঁরা একমত হবেন যে আদালতের ভূমিকা, কাজকর্ম এবং আইনি প্রতিবিধানের ব্যবস্থাদি গত দু’দশকে চোখে পড়ার মতো পাল্টে গিয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য দিক—
১. মামলাগুলির দায়িত্ব বিচারপতিদের (বিশেষ করে প্রিসাইডিং জাজ বা যিনি তত্ত্বাবধায়ক বিচারপতি) মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা;
২. বেঞ্চের কম্পোজিশন বা কোন কোন বিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করা হবে;
৩. আদালতের এক্তিয়ার সম্প্রসারণ;
৪. কিছু রায়ের জুরিসপ্রুডেন্সিয়াল ফাউন্ডেশন বা আইনশাস্ত্রীয় ভিত্তি; এবং
৫. এক্সিকিউটিভদের ক্ষমতা হ্রাস।
পুরনো উদ্বেগগুলি রয়েছে
বিচার বিভাগের সংস্কার বিষয়ে অনেক পণ্ডিত লিখেছেন। অনেক সংস্কার কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলি গ্রহণ করেছে: কিছু বিশেষ আদালত স্থাপন, আরও বিচারপতি নিয়োগ ইত্যাদি; অন্যদিকে সংসদের তরফে—আরও আইন প্রণয়ন; এবং খোদ সর্বোচ্চ আদালতের তরফে ডিজিটাইজেশন, কেস ম্যানেজমেন্ট এবং, হালফিল ভার্চুয়াল কোর্ট। তবু, ঝঞ্ঝাটের ব্যাপারগুলি আগের মতোই থেকে যায়—সমস্ত স্তরে মামলার পাহাড়; বিচারপতিদের বহু শূন্যপদ পূরণ করা হয় না; বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ অসন্তোষ—যে বিচার করা হল তার ‘গুণমান’ সম্পর্কে।
বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা’ নিয়ে যে উদ্বেগ, তা ফের উচ্চারিত হয়েছে। এমন উদ্বেগের কারণগুলি নিম্ন আদালতের জন্য এক রকম, হাইকোর্টের জন্য আরেক রকম এবং সুপ্রিম কোর্টের জন্য অন্য রকম। অর্থাৎ আদালতের স্তর ভেদে নানা রকম।
আমি আপাতত সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে আলোকপাত করব। মৌলিক অধিকারগুলির বিষয়ে এবং ইদানীং বেড়ে চলা মানবাধিকার ও পশু, পরিবেশ/জীববৈচিত্র রক্ষার অধিকারগুলির ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্ট হল ‘সতর্ক’ প্রহরী। এই ভূমিকা পালন করা সম্ভব একমাত্র যদি আদালত সব রকমে স্বাধীন থাকে। আমার মতে, এই স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং বিচারের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় সংস্কার করা হয়। সেই সংস্কারগুলি কী কী এবার বলছি:
সাংবিধানিক আদালত কাম্য
১. কোর্টকে অবশ্যই সাংবিধানিক আদালতে উন্নীত করতে হবে। কিছু মামলায় কিছু জটিল সাংবিধানিক প্রশ্ন ওঠে। সমাধানের জন্য সাংবিধানিক ব্যাখ্যা জরুরি হয়। সর্বোচ্চ আদালত শুধুমাত্র সেই মামলাগুলিই শুনবে এবং সেগুলিতে তার সিদ্ধান্ত জানাবে। এছাড়া জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিরাট গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলায় আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়, সেই বিরল পরিস্থিতিতেও সুপ্রিম কোর্টের পূর্বোক্ত ভূমিকা কাম্য। আমার এই প্রস্তাবে সুপ্রিম কোর্টের সাত জন বিচারপতি ‘একটি’ আদালতে বসবেন। তবে, বেঞ্চগুলিতে তাঁরা যেমন বসেন তেমন নয়।
তৎক্ষণাৎ একটি প্রশ্ন উঠবে: হাইকোর্টের রায়ের পরবর্তী আপিলগুলি কারা শুনবেন? অ্যাপিলেট জুরিসডিকশন (বিচার-পরবর্তী আপিল যে আদালতে গৃহীত হয় তার এক্তিয়ার) সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। এবং, হাইকোর্টগুলি পরস্পর-বিরোধী রায় (কনফ্লিকটিং জাজমেন্ট) দিতেই পারে। এই ক্ষেত্রে সমাধান হল ‘আপিল আদালত স্থাপন’: পাঁচটি আপিল আদালত হবে। প্রত্যেক আদালতের মোট ছ’জন বিচারপতি দু’টি বেঞ্চে ভাগ হয়ে বসবেন। প্রতিটি বেঞ্চে তিনজন করে থাকবেন। সব মিলিয়ে প্রয়োজন তিরিশ জন বিচারপতি। যে-দেশের জনসংখ্যা ১৬১ কোটিতে পৌঁছতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে সেই দেশের পক্ষে এটি বিরাট একটি সংখ্যা নয়।
এইভাবে ৩৭ জন বিচারপতিকে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সংস্কার করা সম্ভব। তার ফলে সুপ্রিম কোর্ট একইসঙ্গে আপিল আদালত এবং সাংবিধানিক আদালতের ভূমিকা পালন করতে পারবে। এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিই, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদিত বিচারপতির পদ ৩৪টি।
২. বেঞ্চকে মামলার দায়িত্ব অর্পণের (অ্যাসাইনিং কেসেস) রেওয়াজ দূর হওয়া প্রয়োজন। নতুন ব্যবস্থায় কোনও বেঞ্চ থাকবে না। তার ফলে রোস্টার মেনটেন করার কোনও মাস্টারও দরকার হবে না। (নিন্দুকেরা বলেন যে, ‘রোস্টারের মাস্টার’ ব্যবস্থাটি ‘মাস্টারের রোস্টার’-এ রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে।) প্রধান বিচারপতি হিসেবে কে এন সিং তাঁর মাত্র ১৮ দিন মেয়াদের কার্যকালে একগুচ্ছ মামল তাঁর বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন এবং রায়ও দিয়েছিলেন। তাঁর অবসরের পর অনেকগুলি রায় রিভিউ বা পর্যালোচনা করার ফলে উল্টে যায়। এমন একটি ঘটনা আমরা জানি, বিচারপতি দীপক মিশ্র একটি মামলায় (যে মামলায় তাঁর নিজের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে) অন্য একটি বেঞ্চের বিচারবিভাগীয় রায় উল্টে দিয়ে তাঁর প্রশাসনিক নির্দেশ প্রয়োগ করেছিলন (অস্বভাবিক হলেও)। তাঁর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রশাসনিক নির্দেশটিকে জোরালো করতে। অতঃপর মামলাটিকে তিন সদস্যের বেঞ্চে অ্যাসাইন করা হয়। এই ব্যাপারটিকে একজন কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন? দু’জন অন্য বিচারপতির সঙ্গে বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চে একটি মামলা অ্যাসাইন করা হয়, যেখানে তাঁরই বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এই বেঞ্চ এই মামলা শুনে যে রায় দিয়েছে তাতে শুধুমাত্র অন্য দু’জন বিচারপতির স্বাক্ষর রয়েছে—একজন এটিকে কীভাবে মার্জনা করতে পারেন? এই দু’টি অবশ্য মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে মামলা অ্যাসাইন করার বা দায়িত্ব অর্পণের রেওয়াজ আমরা অবশ্যই বন্ধ করব।
অন্য সংস্কারগুলি
৩. কারণ বেঞ্চগুলি মামলার শুনানি গ্রহণ করে, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ঘোষিত আইনটি অনিশ্চিত। প্রতিটি সর্বোচ্চ আদালত তার পূর্ববর্তী রুলিং উল্টে দিয়েছে, যদিও সাধারণভাবে এসব ঘটেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন এবং জনমানসে ব্যাপক হইচই হওয়ার কারণে। যাই হোক, ভারতে রায় উল্টে যাওয়ার কারণ দুই বা তিন বিচারপতির বেঞ্চ সাংবিধানিক বেঞ্চের ‘বাইন্ডিং জাজমেন্টগুলি’ অনুসরণ করতে অস্বীকার করে; অথবা তিন বিচারপতির বেঞ্চ সোজাসুজি পূর্বেকার দৃষ্টিভঙ্গির থেকে একেবারে পৃথক একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফেলেছে বলে। একটি উদাহরণ হল—ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে স্বচ্ছতার আইনের (২০১৩) ২৪ ধারা সংশ্লিষ্ট মামলা। কর্মরত আইনজীবীরা আইনি অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আইনের ব্যাখ্যা এবং পুনর্ব্যাখ্যা ভিন্নতর হলে—তাঁদের ব্যক্তিগত এবং ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় গোছানোর সময় সাধারণ নাগরিকদের মনেও অনিশ্চয়তা থেকে।
৪. এক্সিকিউটিভ তাঁর ল’ অফিসারদের মাধ্যমে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়ান যখন বিচারের দৃষ্টিতে ‘রিভিউ’ চান, যা একটি পুরোপুরি প্রশাসনিক অথবা পলিসি বিষয়ক সিদ্ধান্ত, যার পিছনে আইনশাস্ত্রীয় কোনও ভিত্তি থাকে না। যদি এক্সিকিউটিভের পলিসি অথবা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ভুল হয়, তবে সেটা সংশোধনের জায়গা হল সংসদ অথবা বিধানসভা অথবা ভোটের বুথ।
৫. এক্সিকিউটিভদের তরফে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের ‘পুরস্কৃত’ করার যে সুযোগ রয়েছে, সেটা অবশ্যই দূর হওয়া দরকার। অবসর গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত বিচারপতির জীবনভর পুরো বেতন ও ভাতা নেওয়া উচিত, কিন্তু কোনও দায়িত্ব অথবা পদ অথবা সাংবিধানিক অফিস তাঁরা নিতে পারেন না। এটি একটি সামান্য আর্থিক ব্যয়ভারের বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার জন্যে জাতি এটি সানন্দেই বহন করবে।
আরও সংস্কারের ব্যাপারে আপনার চিন্তাভাবনা করা উচিত, কারণ আমরা সবাই চাই একটি স্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট।
১. মামলাগুলির দায়িত্ব বিচারপতিদের (বিশেষ করে প্রিসাইডিং জাজ বা যিনি তত্ত্বাবধায়ক বিচারপতি) মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা;
২. বেঞ্চের কম্পোজিশন বা কোন কোন বিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করা হবে;
৩. আদালতের এক্তিয়ার সম্প্রসারণ;
৪. কিছু রায়ের জুরিসপ্রুডেন্সিয়াল ফাউন্ডেশন বা আইনশাস্ত্রীয় ভিত্তি; এবং
৫. এক্সিকিউটিভদের ক্ষমতা হ্রাস।
পুরনো উদ্বেগগুলি রয়েছে
বিচার বিভাগের সংস্কার বিষয়ে অনেক পণ্ডিত লিখেছেন। অনেক সংস্কার কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলি গ্রহণ করেছে: কিছু বিশেষ আদালত স্থাপন, আরও বিচারপতি নিয়োগ ইত্যাদি; অন্যদিকে সংসদের তরফে—আরও আইন প্রণয়ন; এবং খোদ সর্বোচ্চ আদালতের তরফে ডিজিটাইজেশন, কেস ম্যানেজমেন্ট এবং, হালফিল ভার্চুয়াল কোর্ট। তবু, ঝঞ্ঝাটের ব্যাপারগুলি আগের মতোই থেকে যায়—সমস্ত স্তরে মামলার পাহাড়; বিচারপতিদের বহু শূন্যপদ পূরণ করা হয় না; বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ অসন্তোষ—যে বিচার করা হল তার ‘গুণমান’ সম্পর্কে।
বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা’ নিয়ে যে উদ্বেগ, তা ফের উচ্চারিত হয়েছে। এমন উদ্বেগের কারণগুলি নিম্ন আদালতের জন্য এক রকম, হাইকোর্টের জন্য আরেক রকম এবং সুপ্রিম কোর্টের জন্য অন্য রকম। অর্থাৎ আদালতের স্তর ভেদে নানা রকম।
আমি আপাতত সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে আলোকপাত করব। মৌলিক অধিকারগুলির বিষয়ে এবং ইদানীং বেড়ে চলা মানবাধিকার ও পশু, পরিবেশ/জীববৈচিত্র রক্ষার অধিকারগুলির ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্ট হল ‘সতর্ক’ প্রহরী। এই ভূমিকা পালন করা সম্ভব একমাত্র যদি আদালত সব রকমে স্বাধীন থাকে। আমার মতে, এই স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং বিচারের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব যদি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় সংস্কার করা হয়। সেই সংস্কারগুলি কী কী এবার বলছি:
সাংবিধানিক আদালত কাম্য
১. কোর্টকে অবশ্যই সাংবিধানিক আদালতে উন্নীত করতে হবে। কিছু মামলায় কিছু জটিল সাংবিধানিক প্রশ্ন ওঠে। সমাধানের জন্য সাংবিধানিক ব্যাখ্যা জরুরি হয়। সর্বোচ্চ আদালত শুধুমাত্র সেই মামলাগুলিই শুনবে এবং সেগুলিতে তার সিদ্ধান্ত জানাবে। এছাড়া জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিরাট গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলায় আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়, সেই বিরল পরিস্থিতিতেও সুপ্রিম কোর্টের পূর্বোক্ত ভূমিকা কাম্য। আমার এই প্রস্তাবে সুপ্রিম কোর্টের সাত জন বিচারপতি ‘একটি’ আদালতে বসবেন। তবে, বেঞ্চগুলিতে তাঁরা যেমন বসেন তেমন নয়।
তৎক্ষণাৎ একটি প্রশ্ন উঠবে: হাইকোর্টের রায়ের পরবর্তী আপিলগুলি কারা শুনবেন? অ্যাপিলেট জুরিসডিকশন (বিচার-পরবর্তী আপিল যে আদালতে গৃহীত হয় তার এক্তিয়ার) সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। এবং, হাইকোর্টগুলি পরস্পর-বিরোধী রায় (কনফ্লিকটিং জাজমেন্ট) দিতেই পারে। এই ক্ষেত্রে সমাধান হল ‘আপিল আদালত স্থাপন’: পাঁচটি আপিল আদালত হবে। প্রত্যেক আদালতের মোট ছ’জন বিচারপতি দু’টি বেঞ্চে ভাগ হয়ে বসবেন। প্রতিটি বেঞ্চে তিনজন করে থাকবেন। সব মিলিয়ে প্রয়োজন তিরিশ জন বিচারপতি। যে-দেশের জনসংখ্যা ১৬১ কোটিতে পৌঁছতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে সেই দেশের পক্ষে এটি বিরাট একটি সংখ্যা নয়।
এইভাবে ৩৭ জন বিচারপতিকে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সংস্কার করা সম্ভব। তার ফলে সুপ্রিম কোর্ট একইসঙ্গে আপিল আদালত এবং সাংবিধানিক আদালতের ভূমিকা পালন করতে পারবে। এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিই, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদিত বিচারপতির পদ ৩৪টি।
২. বেঞ্চকে মামলার দায়িত্ব অর্পণের (অ্যাসাইনিং কেসেস) রেওয়াজ দূর হওয়া প্রয়োজন। নতুন ব্যবস্থায় কোনও বেঞ্চ থাকবে না। তার ফলে রোস্টার মেনটেন করার কোনও মাস্টারও দরকার হবে না। (নিন্দুকেরা বলেন যে, ‘রোস্টারের মাস্টার’ ব্যবস্থাটি ‘মাস্টারের রোস্টার’-এ রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে।) প্রধান বিচারপতি হিসেবে কে এন সিং তাঁর মাত্র ১৮ দিন মেয়াদের কার্যকালে একগুচ্ছ মামল তাঁর বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন এবং রায়ও দিয়েছিলেন। তাঁর অবসরের পর অনেকগুলি রায় রিভিউ বা পর্যালোচনা করার ফলে উল্টে যায়। এমন একটি ঘটনা আমরা জানি, বিচারপতি দীপক মিশ্র একটি মামলায় (যে মামলায় তাঁর নিজের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে) অন্য একটি বেঞ্চের বিচারবিভাগীয় রায় উল্টে দিয়ে তাঁর প্রশাসনিক নির্দেশ প্রয়োগ করেছিলন (অস্বভাবিক হলেও)। তাঁর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রশাসনিক নির্দেশটিকে জোরালো করতে। অতঃপর মামলাটিকে তিন সদস্যের বেঞ্চে অ্যাসাইন করা হয়। এই ব্যাপারটিকে একজন কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন? দু’জন অন্য বিচারপতির সঙ্গে বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চে একটি মামলা অ্যাসাইন করা হয়, যেখানে তাঁরই বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এই বেঞ্চ এই মামলা শুনে যে রায় দিয়েছে তাতে শুধুমাত্র অন্য দু’জন বিচারপতির স্বাক্ষর রয়েছে—একজন এটিকে কীভাবে মার্জনা করতে পারেন? এই দু’টি অবশ্য মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে মামলা অ্যাসাইন করার বা দায়িত্ব অর্পণের রেওয়াজ আমরা অবশ্যই বন্ধ করব।
অন্য সংস্কারগুলি
৩. কারণ বেঞ্চগুলি মামলার শুনানি গ্রহণ করে, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ঘোষিত আইনটি অনিশ্চিত। প্রতিটি সর্বোচ্চ আদালত তার পূর্ববর্তী রুলিং উল্টে দিয়েছে, যদিও সাধারণভাবে এসব ঘটেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন এবং জনমানসে ব্যাপক হইচই হওয়ার কারণে। যাই হোক, ভারতে রায় উল্টে যাওয়ার কারণ দুই বা তিন বিচারপতির বেঞ্চ সাংবিধানিক বেঞ্চের ‘বাইন্ডিং জাজমেন্টগুলি’ অনুসরণ করতে অস্বীকার করে; অথবা তিন বিচারপতির বেঞ্চ সোজাসুজি পূর্বেকার দৃষ্টিভঙ্গির থেকে একেবারে পৃথক একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফেলেছে বলে। একটি উদাহরণ হল—ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে স্বচ্ছতার আইনের (২০১৩) ২৪ ধারা সংশ্লিষ্ট মামলা। কর্মরত আইনজীবীরা আইনি অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আইনের ব্যাখ্যা এবং পুনর্ব্যাখ্যা ভিন্নতর হলে—তাঁদের ব্যক্তিগত এবং ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় গোছানোর সময় সাধারণ নাগরিকদের মনেও অনিশ্চয়তা থেকে।
৪. এক্সিকিউটিভ তাঁর ল’ অফিসারদের মাধ্যমে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়ান যখন বিচারের দৃষ্টিতে ‘রিভিউ’ চান, যা একটি পুরোপুরি প্রশাসনিক অথবা পলিসি বিষয়ক সিদ্ধান্ত, যার পিছনে আইনশাস্ত্রীয় কোনও ভিত্তি থাকে না। যদি এক্সিকিউটিভের পলিসি অথবা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ভুল হয়, তবে সেটা সংশোধনের জায়গা হল সংসদ অথবা বিধানসভা অথবা ভোটের বুথ।
৫. এক্সিকিউটিভদের তরফে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের ‘পুরস্কৃত’ করার যে সুযোগ রয়েছে, সেটা অবশ্যই দূর হওয়া দরকার। অবসর গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত বিচারপতির জীবনভর পুরো বেতন ও ভাতা নেওয়া উচিত, কিন্তু কোনও দায়িত্ব অথবা পদ অথবা সাংবিধানিক অফিস তাঁরা নিতে পারেন না। এটি একটি সামান্য আর্থিক ব্যয়ভারের বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার জন্যে জাতি এটি সানন্দেই বহন করবে।
আরও সংস্কারের ব্যাপারে আপনার চিন্তাভাবনা করা উচিত, কারণ আমরা সবাই চাই একটি স্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট।
লেখক সংসদ সদস্য এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত
No comments:
Post a Comment